বাঙালির চিন্তা বড়ই সীমাবদ্ধ। পারিভাষিক শব্দের ৫ বৈশিষ্ট্য বা গুণ থাকা আবশ্যক।
১. সর্বজন স্বীকৃতি ও প্রয়োজনীয়তা: অভিধান ভর্তি পারিভাষিক শব্দের তালিকা থাকলে তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না অভিধানের স্বাস্থ্যবৃদ্ধি ছাড়া।
২. স্বাভাবিকতা ও সহজবোধ্যতা: সহজবোধ্য শব্দ রেখে ধুম্রষ্ট্রং ধারার শব্দে গণের আগ্রহ নাই। গণ সহজবোধ্য শব্দেই আগ্রহী বেশি।
৩. অর্থবাচকতা ও বিশিষ্টার্থ প্রয়োগ:
৪. অনাড়ষ্টতা ও দ্ব্যর্থহীনতা
৫. ধ্বনিমাধুর্য ও সংক্ষিপ্ততা
পরিভাষা নির্মাণের রীতি
৫টি রীতি অনুসরণ করে পরিভাষা নির্মাণ করা যেতে পারে,
১. প্রতিবিম্বায়ন: ইংরেজি / বিদেশি ভাষার উচ্চারণ সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রেখে। আপনি মানেন আর নাই মানেন অজস্র ইংরেজি শব্দ বাংলায় ঢুকেছে, ঢুকবে, ঢুকছে। আমাদের ভাষাবিদগণ সেগুলো থেকে বেছে বেছে কিছুকে বিদেশি উৎসের বাংলা বলে মেনে নিলেও, বিশাল সংখ্যক শব্দকে অস্বীকার করে বসেন। এটা হাস্যকর। সাধারণ মানুষের হাতে থাকা সিম কার্ডের বাংলা আপনি করতে পারবেন না। কোনভাবেই না।
২। রূপায়ণ: ইংরেজি / বিদেশি শব্দের উচ্চারণ আংশিক পরিবর্তন করে। যেমন : হাসপাতাল, ডাক্তার, বোতল, আকাদেমি, টেবিল। এরকম আংশিক উচ্চারণের বড়সড় একটা নজির হলো জাদরেল; ইংরেজি জেনারেল বাংলায় এসে কিভাবে জাদরেল হয়ে গেল! অবশ্য অর্থও বদলে গেছে খানিকটা
৩। নির্মাণ: বাংলা ব্যাকরণ ও শব্দগঠনের রীতি অনুসারে সম্পূর্ণ নতুন শব্দ নির্মাণ। এই কাজে আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ, বাংলার গবেষণাগার থেকে তৈরি কোন শব্ গত কয়েক শতকেও আসে নি। গুটিকয়েক যেগুলো আসছে আভিধানিকরা সেগুলোকে বাংলা বলেই স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। তাতে অবশ্য ওসব শব্দের কিছু আসে যাচ্ছে না।
৪। নবায়ন: অব্যবহৃত শব্দের সম্পূর্ণ বা আংশিক অর্থ পরিবর্তন / আংশিক বানান পরিবর্তন / পরিবর্তন না করে।
৫। কৃতঋণ: অন্য ভাষা থেকে শব্দ ধার করে। যেমন: Green>সবুজ (ফারসি)-এর বাংলা নাই।
উপনীতিমালা
পরিভাষা ব্যবহারের আবশ্যক ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা" অনুসরণ করা উচিত।
একই অর্থ নির্দেশের জন্য বিভিন্ন শব্দ এবং বিভিন্ন অর্থ নির্দেশের জন্য একই শব্দ বৈজ্ঞানিক তথ্যাদির সুষ্ঠু প্রকাশ ব্যাহত করে বিধায় যথাসম্ভব একটিমাত্র বাংলা প্রতিশব্দ নির্বাচন করতে হবে।
বিদেশি ভাষার সমার্থক শব্দসমূহের জন্য পৃথক পৃথক পরিভাষা বা প্রতিশব্দ তৈরি করা যাবেনা।
কোনো বিভাষি শব্দ যদি জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাহলে পৃথক পৃথক বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি হতে পারে। তবে ভিন্ন প্রতিশব্দ যদি ইতোমধ্যেই চালু না থাকে তাহলে বাংলাতেও বিভিন্ন শাখায় এরূপ ব্যবস্থা করা যায় কি-না ভেবে দেখতে হবে।
বাংলা প্রতিশব্দ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাষি শব্দটির শুধু বাহ্যিক অর্থ বিবেচনা না করে শব্দটির ব্যবহারিক ও বৈজ্ঞানিক সত্তায় প্রতীকী নাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার প্রতি লক্ষ্য রেখে অর্থাৎ অন্তর্নিহিত অর্থব্যঞ্জনা অনুধাবন করে উপযুক্ত বাংলা প্রতিশব্দ নির্বাচন করতে হবে।
নির্বাচিত শব্দ যথাসম্ভব বানান জটিলতা, উচ্চারণ জটিলতা, বর্ণজট বা যুক্তবর্ণ মুক্ত, দ্বিত্ব উচ্চারণ ও বাহুল্যমুক্ত তথা সহজ সরল, সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল হতে হবে।
বহুল ব্যবহৃত যেসব বিভাষি শব্দের প্রতিশব্দ ইতোমধ্যে রয়েছে বা মূল ভাষার শব্দটি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেসব শব্দ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে ব্যবহৃত শব্দ, যন্ত্রপাতি, প্রসাধনী, ক্রীড়া সামগ্রী, নতুন আমদানিকৃত পণ্য বা সরঞ্জাম ইত্যাদির অপরিবর্তিত রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে। তবে তা আরোপিত শর্তাদি মেনে।
নবনির্মিত শব্দটি বাংলা ব্যাকরণকে মেনে চলে কিনা অর্থাৎ তার সাথে বিভক্তি, প্রত্যয়, উপসর্গ, অনুসর্গ ইত্যাদি যুক্ত হতে পারে কি-না তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।
বাংলা ব্যাকরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন শব্দ নির্বাচন করা যাবেনা।
নির্মিত শব্দটি যাতে শ্রুতিমধুর ও সহজবোধ্য হয় তার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে। তবে এর চাইতেও দ্ব্যর্থহীনতা গুণটিতে অধিকতর মনোনিবেশ থাকা বাঞ্ছনীয়।
দর্পণায়নের প্রাসঙ্গিক নীতিমালা
বাংলায় কোন প্রতিশব্দ বর্তমান না থাকলে আগত শব্দটি প্রয়োগ করা যাবে।
যেমন: পুলিশ চোরকে ধরতে এসেছে। পুলিশের কোন বাংলা প্রতিশব্দ নেই।
বাংলায় টেকসই প্রতিশব্দ না থাকলে প্রয়োগ আগত শব্দটি ব্যবহার করা যাবে।
যেমন: ছেলেমেয়েরা টেলিভিশন দেখছে। টেলিভিশন শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ দূরদর্শন। তবে এ শব্দটি টেকসই নয়।
মূল ভাষায় প্রতিশব্দটি অতি অপ্রচলিত হলে আগত শব্দ প্রয়োগ করা যায়।
যেমন: টেবিলে কলমটা রাখো। টেবিলের প্রতিশব্দ চৌপায়া, তবে এটি একদমই অপ্রচলিত।
বাংলা প্রতিশব্দটি সর্বসাধারণের বোধগম্য না হলে আগত শব্দটি ব্যবহার করা যাবে। যেমন:
গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ডিগ্রির প্রতিশব্দ মাননির্ণয়ক বিশেষ বলে অভিহিত করা হয়, কিন্তু এটি দ্বারা ডিগ্রির কোন ভাবই প্রকাশ পায়না। তাই ডিগ্রি লেখাই শ্রেয়।
পৌনঃপুনিক ব্যবহারের কারণে প্রতিশব্দ থাকলেও আগত শব্দটি প্রয়োগ করা যাবে।
যেমন: অ্যাকাউনট্যান্ট পদে লোক নিয়োগ করা হবে। Accountant-এর প্রতিশব্দ হিসাবরক্ষক। কিন্তু অ্যাকাউনট্যান্ট বারবার ব্যবহৃত হয়।
বাংলায় সহজে গ্রহণযোগ্য ও অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন আগত শব্দটি প্রয়োগ করা যাবে।
যেমন: টেলিফোন নষ্ট হয়ে গেছে। টেলিফোনের প্রতিশব্দ ‘দূরালাপনী’ কিন্তু টেলিফোন অধিকতর সহজ।
অফিস-আদালতে বহুল ব্যবহৃত আগত শব্দটি ব্যবহার করা যাবে।
যেমন: বিল জমা দেওয়া হোক। এখানে বিলের পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ প্রয়োগ করা ঠিক নয়।
বহুল ব্যবহৃত যেসব বিভাষি শব্দের প্রতিশব্দ ইতোমধ্যে রয়েছে বা মূল ভাষার শব্দটি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেসব শব্দ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে ব্যবহৃত শব্দ, যন্ত্রপাতি, প্রসাধনী, ক্রীড়া সামগ্রী, নতুন আমদানিকৃত পণ্য বা সরঞ্জাম ও বহুল প্রচলিত বিশেষ্যপদের অপরিবর্তিত রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে। তবে তা আরোপিত শর্তাদি মেনে