কত ধানে কৃষক

রম্য পড়তে সময় লাগবে: 2 মিনিট

সেবছর নোয়াখালী গিয়েছিলাম। দুই ভদ্রলোক কৃষক নিয়ে ঝগড়া লেগেছেম। দুজনের কারুরই নাম জানি না আমি। একজন সম্ভবত ফেনীর বাসিন্দা, অন্যজনেরটা ধরতে পারিনি, তবে আন্দাজ করেছি চট্টলারই কেউ হবেন। ফেনীর ভদ্রলোকটি কালো চশমা দিয়ে চোখ ঢেকে রেখেছেন, জিয়াউর রহমান যেমনটা করতেন আরকি। পরনে সাদা ফ্যাব্রিকের কারুকাজ করা পাঞ্জাবি, গায়ে গতরে দ্বিতীয় স্তরের স্বাস্থ্যবান, এরশাদ যখন রাষ্ট্রপতি ছিল তখন যেরকম স্বাস্থ্য ছিল সেরকম লাগছে খানিকটা, উচ্চতা আহামরি না, গড়পড়তার চেয়ে কিছুটা কম। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ আছে বলে মনে হচ্ছে, যদিও আভিজাত্য নিয়ে আমার কোন ধারণা নাই।
অন্য ভদ্রলোকটি তার ছেলের সঙ্গে এসেছেন, ছেলে আমার মতই ভর্তি পরীক্ষার্থী। আমার পরিক্ষা যদিও বেগমগঞ্জে তবে বসে আছি তখন সোনাপুরে। প্রসঙ্গক্রমে নোয়াখালী গিয়ে আমার যা মনে হল এখানে সোনা শব্দটি বেশকিছু জায়গার নামে বহুল ব্যবহৃত হয়। সোনাইমুড়ীও আছে দেখলাম। তো যাই হোক ভদ্রলোক অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি পরিক্ষার্থীদের জন্য গরু জবাই করেছে নোয়াখালী বাসী মর্মে সংবাদ দেখেছেন কিন্তু সরেজমিনে তার প্রমাণ পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাতায়াতের জন্য যেসব বাস দেওয়া হয়েছে সেগুলোতেও তাকে কষ্ট করে উঠতে হয়েছে। খাওয়ার বিষয়টি তিনি ছেড়েই দিলেন। কিন্তু কোন এক মসজিদে রাতে থাকতে চেয়েছিলেন অথচ সেখানকার ইমাম বা মুয়াজ্জিন তাকে থাকতে দেয়নি। উনার এসব আক্ষেপের মধ্যে শরিক হলেন ফেনীর ভদ্রলোক। মূলত আক্ষেপের সাদৃশ্য থেকেই তাদের মধ্যে সাময়িক বন্ধুত্বটা হয়েছিল। তাদের দুজনের পাশে ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন চাচা জেঠু। তবে তারা কিছু উঠতিবয়সী ছাত্রলীগ সমর্থকদের মত সহমত ভাই গোছের আরকি। কেবল হু হা করছেন, মাঝেমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি কোণে মাথা দুলাচ্ছেন। আমার এদিকে পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে। সোনাপুর থেকে বেগমগঞ্জ যেতে হবে তো! তবে আলাপের মোড় যেদিকে যাচ্ছে তা ছেড়েও যেতে পারছি না। ফেনী আংকেল কথা প্রসঙ্গে বললেন যে তিনি একজন কৃষক। সেখান থেকেই ঘটনার শুরু। ছেলেওয়ালা আংকেলটি কোনভাবেই তা মানতে চাচ্ছেন না। তিনি জিয়াসদৃশ ব্যক্তিকে কৃষক ভাবতে পারছেন না কোনভাবেই। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেই বসলেন যে তিনি কোন দিক থেকে কৃষক।
তার মতে তিনি অনেক কৃষিজমির মালিক, কৃষিই তার আয়ের উৎস সেদিক থেকে তিনি কৃষক। তবে ছেলেওয়ালা আংকেল এই সংজ্ঞা মানতে নারাজ, মাঠে কাজ না করলে তিনি কাউকে কৃষক বলতে নারাজ।