চিড়িয়াখানাকে না বলুন

পড়তে সময় লাগবে: 2 মিনিট প্রকাশের তারিখ: জুলাই 14, 2020

ভাবুন তো আপনার জীবনের কোনও একটি দিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না আপনি! কল্পনা করুন - আপনি কখন খাবেন, আপনি কী খাবেন, কখন আপনি ঘুমাবেন, আপনি কোথায় যেতে পারবেন বা কাকে নিয়ে আপনি একটি পরিবার শুরু করবেন কোনোটাই আপনার ইচ্ছায় হবে না। চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য এটিই বাস্তবতা, যারা জীবন্ত প্রদর্শনীতে রূপান্তরিত হয়। চিড়িয়াখানায় কিছু প্রাণীকে খুব ছোট ঘেরের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়, কেউ কেউ জীবনের নিষ্ঠুরতার কাছে হার মেনে অবজ্ঞাপূর্ণ কৌশল বা অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য হয়। বঙ্কিমের বিড়ালের মতো তারাও আমাদের ব্যাঙ্গ করছে না তো এভাবে? এমনকি সেরা চিড়িয়াখানাতেও, সর্বোত্তম ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হোকনা সেটা সাফারি পার্ক, বন্দিজীবন বন্য প্রাণীদের জন্য মোটেই সুখের জীবন নয় কিংবা হয়তো জীবনই নয়!

চিড়িয়াখানা দেখে আপনি হয়তো ভাবতেই পারেন যে এগুলিই বুঝি তাদের ঘর এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বেশিরভাগ এর মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে তারা নিরাপদে আছে বা সুখে আছে!! আসলে যে তা নয়! হাজত কারো বসত-ভিটা হতে পারে না!!

বন্য অঞ্চলে, প্রাণী কয়েক শ মাইল ঘোরাফেরা করতে পারে, শিকার করতে পারে নিজ প্রয়োজনে, তাদের বাচ্চাদের বড় করতে, খুঁজাখুঁজি করতে, খেলতে এবং মধুর সামাজিক সম্পর্কটাও উপভোগ করতে পারে। তবুও চিড়িয়াখানায় তাদের জীবন চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আবদ্ধকরণের ফলে এবং স্বাভাবিক উদ্দীপনার অভাবে প্রায়শই অস্বাভাবিক এবং স্ব-ধ্বংসাত্মক আচরণ করে। আর চিড়িয়াখানা রক্ষকরা মাঝে মাঝেই এসব প্রাণীদেরকে অ্যান্টি-ডিপ্রেশন, ট্র্যানকিলাইজার বা অ্যান্টি-সাইকোটিক ড্রাগ দিয়ে ঝামেলাগুলো আড়াল করার চেষ্টা করে।

অনেক চিড়িয়াখানাতে বয়োবৃদ্ধ বা উদ্বৃত্ত প্রাণীকে হত্যা করে বা অনৈতিকভাবে বহিরাগত-পশু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে বিষয়টি “নিষ্পত্তি” করারও দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে। এর ব্যতিক্রম থাকলে থাকতেও পারে তবে তাও প্রশংসনীয় নয়। কাউকে বন থেকে কেড়ে এনে বনে ফিরিয়ে দেওয়াতে বাহাদুরি কিসের? এতো অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত।

একটি ব্রিটিশ চিড়িয়াখানায় বেবুন এবং বিপন্ন হরিণ সহ জবাই করা প্রাণীর মৃতদেহ ডালের পাশে পঁচাবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। কলকাতার চিড়িয়াখানা খাদ্যের অভাবে সিংহের দুর্ভোগ কিংবা বাঘিনী কল্পনার করোনা ভাইরাস হওয়া অথবা জার্মানির উত্তর পশ্চিম অংশের ক্রেফিল্ড চিড়িয়াখানাতে মানুষের নামক প্রাণীর উড়ানো ফানুশের আগুনে ৩০ টি গরিলা, শিম্পাঞ্জি ও বানরের মৃত্যুর দায় কি আমরা এড়াতে পারবো?