নিজের সচ্চরিত্রের ফিরিস্তি

পড়তে সময় লাগবে: 4 মিনিট

নিজের সচ্চরিত্রের ফিরিস্তি দেওয়া সহজ। মাঝেমধ্যে আমি অবাক হই, অবাক হই মানুষের বেধে নিয়ম তথা তামাশায়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যাকে আমাদের চেয়ে ভালো কেউ চিনে না আমি। আমি সাধু নই আপাদমস্তক, আমি চুরি করেছি, মানুষের টাকা মেরে খেয়েছি, জ্যান্ত খেয়েছি। একবার ঈশ্বরগঞ্জ থেকে বাড়ি যাবার পথে বিআরটিসি থেকে নেমে গেছি পাঁচ টাকা না দিয়েই, কেউ নিতে আসেনি, আমিও নিজ থেকে দিইনি। ঈশ্বরগঞ্জ থেক ময়মনসিংহের পথে দেওয়া হয় নি এমকে সুপারের প্রাপ্য ত্রিশ টাকা ভাড়া, ইচ্ছে করে দিইনি এবার। শেওড়াপাড়া থেকে সেনপাড়া যেতে দশ টাকা বাস ভাড়া, একবার সে ভাড়াও দিইনি! ওই যে কেউ নেয়নি। এক হালি লেবু চেয়েছিলাম কুন্তুর কাছে, সে আমাকে প্রায় পাঁচ হালি দিয়ে ফেলেছিল ভালোবেসে, আমি এক হালির দামও দিইনি। তার সাথে অনেক দিন হলো দেখা হয় না। শেলী আপা দোকান খুলেছিল, পাঁচ টাকা বাকিতে কিছু একটা এনেছিলাম তার কাছ থেকে। সহসা সে দোকান ছেড়ে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল, আমি আর তাকে টাকা দিই নি, তাকে পাইনি। পাইনি সে প্রতি শনি আর শুক্রবারে লক্ষীর হাটে তেল বেচা মুদিকে, তার পাঁচ টাকা আজও আমার কাছে রয়ে গেছে। এতো গেল মেরে খাওয়ার কথা। কত টাকা জ্যান্ত খেয়েছি সে হিসাবের খাতার পাতা উল্টিয়ে শেষ হবে না।

আমি কেবল অর্থ খাই নি, অনর্থও খেয়েছি। একটা মানুষকে, না একটা পুরো পরিবারকে আমি খেয়ে নিয়েছি। সে পরিবারের কঙ্কালসার শৃঙ্খলে আমিও আবদ্ধ, আজকে পর্যন্তও।

দু-এক পাতা থেকে ছিড়ে আনা কিছু খুচরো অংশের হিসাব বলব।

আমি যে পরিবারে জন্ম নিয়েছি সেটি নিম্ন, মধ্য, বা উচ্চ কোন বিত্তের মধ্যে পড়ে সে হিসাব আগে কখনও করা হয় নি। শৈশবে সে হিসেবের প্রয়োজন কখনও পড়েনি, তাই হিসবাটা রপ্ত করার প্রয়োজনও হয়নি। বাবা মাঝেমধ্যেই বলেন, সমবয়সী সবার তুলনায় আমার আবদারগুলো অনেক অনেক ছোট। কিন্তু আমি জানি ওই ছোট আবদারগুলো আমি কেবল শৈশবেই করতাম, বড় হওয়ার সাথে সাথে আবদারগুলোও বড় হতে লাগল। বছর পরিক্রমায় আমি আমার এখন বাবার চেয়ে উচ্চতায় বড়; আমার আবদারগুলো মোটেও আর ছোট নয়। বরং এতটাই বড় যে বাবা আর সেগুলোর নাগাল পাচ্ছেন না। বিশ টাকার রং পেন্সিল, দশ টাকার খাতা, পাঁচ টাকার কলম, তিন টাকার সুতো আর বোড়ের আবদারগুলো এখন আর দশের কোটায় নেই। ঈদ আসলে নতুন জামা কেনার বায়না আমার কখনও ছিল না। কেন ছিল না? কেন করিনি? আমি না জানলেও আমার অবচেতন মন হয়ত জানতো আমি কোন বিত্তের মধ্যে নই, বিত্তের বাইরে; বলা যায় বিত্তহীন। তবে ব্যাপারটা আমি জানতাম না। জানলে এই বন্ধুর পথ পাড়ি দিতাম না কভুও। বন্ধুর পথ! শব্দটাও কেমন কেমন না? বন্ধুর পথ অথচ তাতে বন্ধুত্বের নামনিশানা নেই; কোথাও গিরি আর কোথাও খাদের যে অমসৃণ রাস্তা সেই রাস্তাটাই বন্ধুর!

The socioeconomic status of the family into which I was born—whether low, middle, or high income—has never been a consideration for me. I never needed to engage in such calculations during my childhood, so there was no reason to do so. My father occasionally remarks that my needs are much smaller than what is typical for my age. However, I recognize that the small wishes I once had as a child have evolved as I have grown. Now, I am taller than my father, and my demands are no longer small; they have become so substantial that he can no longer fulfill them.

The days of needing merely twenty-rupee colored pencils, ten-rupee notebooks, five-rupee pens, and three-rupee thread and cotton are long gone; those items can no longer fit within a ten-rupee budget. I was never particularly serious about purchasing new clothes for Eid. Why was that? Why didn’t I pursue it? Perhaps my subconscious understood that I was not surrounded by wealth—indeed, one could say I was without money—even if I did not consciously acknowledge it. Had I been aware, I might have chosen not to traverse this uneven path.

কেন আমি নিম্নবিত্ত নই!

প্রার্চুর্যের দাঁড়িতে সবচেয়ে স্বল্প যে প্রাচুর্যকে তোমরা বলো নিম্নবিত্ত, দরিদ্র আমি তারও স্বল্প তারও স্বল্প। অতএব তোমরা আমাকে নিম্নবিত্ত বলতে পারো না।

On the scale of abundance, where the miserable are considered the lowest, I find myself even below that. So you can’t label me as lower class.

৭ সেপ্টেম্বর ২০২২,