গালির আবার শালীন অশালীন কি! ব্যাপারটা অনেকটাই তাই, গালির শালীন অশালীন হয় না। গালি মানে গালি, গালি শালীনও না, অশালীনও না।
:) না, গালি অবশ্যই অশালীন, আগেরটা ভাইরাসের সংজ্ঞা থেকে কপি মেরে দিসি। গালাগালিতে আমি তেমন পটুয়া নই, তবে খুব বেশি রাগালে ছোটবেলায় গালিগালাজ করিনি তা না! মাঝেমধ্যে সেগুলো গালি না প্রলাপ তা বুঝতে অনেকের কষ্ট হত; মাঝেমধ্যে সেগুলো সত্যি সত্যিই গালি হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ কষ্ট পেত। যদ্দুর মনে পড়ে মুক্তা জেঠিমা একদিন বে কষ্ট পেয়েছিলেন। কেউ কেউ গালিগুলো শোনার জন্য ইচ্ছে করেই আমাকে কষ্ট দিত। এই তালিকায় অনেকেই আছে; তবে রশিদ জেঠার জুড়ি মেলা ভার! এক মিনিট…. রশিদ জেঠা নাকি রাশিদ জেঠা? এই দুজনের নাম আমার মনে থাকত না কখনই। কবছর আগ থেকেই সমস্যা সমাধান করেছি এক অদ্ভুত ট্রিক্স আয়ত্ত করার মাধ্যমে। যিনি বয়সে বড় তার নামটাও বড়; অর্থাৎ তার নামে একট অতিরিক্ত আ’কার আছে, ছোট জনের নামে নেই! কে বড় কে ছোট সেটা আগে নির্ণয় করাটা সহজ ছিল একজন হাফেজ মানুষ, মুখভর্তি দাড়ি অন্যজন ক্লিনশেভ করেন; এমনিতে লুঙ্গি পরেন তবে কৃষিকাজে প্যান্ট পরেন। তবে যুগের সাথে দুজনের চেহারাই এখন সমানরকম বুড় দেখাচ্ছে, দুজনেই দাড়ি রাখছেন; পাঞ্জাবি পরছেন; মসজিদে যাচ্ছেন। এরকম ঘটনা তখন হলে বেকায়দায় পড়ে যেতাম। এখন সমস্যা নেই বয়স বেড়েছে, এমনিতেই কারুর নাম ভুলে যাই না! বলে রাখা ভালো, নাম যে কেবল আমি ভুলে যেতাম তা না! বছর দুয়েক আগে এক বিশে মামলায় তাদের দুই ভাইকেই আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তাদের নাম সম্ভবত ইংরেজিতে লেখা ছিল এবং বেচারা বিচারককে বেশ বে পোহাতে হয়েছিল রশিদ আর রাশিদকে আলাদা করতে! ইংরেজিতে দুইটাই ছিল Rashid!
তো কাজের কথায় আসি, বয়সে আমি তখন কচি; ক্লাস সেভেন বা সেক্সে পড়ি সম্ভবত; মাদারfাকার নামে এক অদ্ভুত গালি আছে আমি তো জানতাম না, কিন্তু শব্দটা যে গালি তা ঠিকই ধরতে পেরেছিলাম প্রথম শোনার সময়েই। তো সে থেকে মাথায় ভনভন ঘুরতেছে যে জিনিসটার অর্থ করলে কী হয়! কার মাদার আর কে ফাকার, তবে আল্লার(?) কসম, মাদার অর্থ জানলে আমি ফাকার অর্থ জানতাম না। ফাকার অর্থ না জানায় তখন সেই বয়সে আর অর্থটা মিলানো হয় নি। সেই যুগে ইংরেজির মাস্টা তোফাজ্জল স্যার স্কুল ছুটির পর আরও দশ মিনিট আমাকে অফিসরুমে আটকে রাখতেন, উদ্দেশ্য আমার মাথা খাওয়া! রোজ দশ থেকে বিশটা কর বোকাবুলারি আমার খাতায় তুলে দিতেন; তারপর অকুস্থলেই একটা হালকা পাতলা জিকির করিয়ে তবেই ছাড়তেন। যেসব শব্দ নতুন পেতা কোথাও, আমিও সেগুলো টুকে রাখতাম; জিকিরের সময় অর্থটা পুছে নেওয়া যেত। তবে অশ্লীলতার অনুমানে স্যারের থেকে ফাকা অর্থটা পুছা হয় নি তখন আর। কিন্তু এরকম একটা গালি যেটা সবাই দিচ্ছে আর আমি সেটা মিস করব; ভবিষ্যতে নস্টালজিয়া বলে কিছ থাকবে না ক! ভেবেচিন্তে শব্দটাকে “মাথাফাঁকা"য় রূপান্তর করে নিলাম। কাউকে এক ঝটকায় দিয়ে বসলে সে এইটারে গালি ভেবেই নিয় নেয়! আমার নস্টালজিয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনায় পূর্ণ হয়, তারপরও এরকম শ্লীল গালি দিয়ে আমি বেঁচে যাই গালিবাজ হওয়া থেকে, অথ যাদেরকে গালি দিলাম তারা নিজেকে গালিখেকো বলেই ভেগে গেল। কী স্বস্তির নিঃশ্বাস!
এরও আগে আরেকটা অশ্লীল শব্দ কিংবা গালির সঙ্গে আমার পরিচয়; সময়তারিখ ঠিক করে বলতে পারব না। তবে জিনিসটা মাথায় আসত “চকচক করলেই সোনা হয় না” আর “আমার সোনার বাংলা” বলতে গেলেই। আমার এলাকার স্বর্ণরে কেউ সোনা বল ডাকে না; এমনকি এই নাম বললে চিনবেও না। তাদের কাছে সোনা মানে স্ত্রী প্রজননাঙ্গ! তো যস্মিন দেশে যদাচার মেনেই আমর “চকচক করলেই সোনা হয় না"র অর্থ করতাম বড় হয়ে; আর ছোট থাকতে আমার সোনার বাংলা বলতেই পুরো স্কুলজুড়ে অট্ট আর মুচকি উভ হাসির ঢেউ খেলে যেত। তখন সোনার স্বর্ণার্থ জানাই ছিল না। ওই একটা অর্থই মানে স্ত্রীযৌনাঙ্গই জানতাম। বয়স যখন আমার ১৭ তখন এই ধারণাতেও বাগড়া বসিয়ে দেয় টাঙগাইলের এক ছেলে। সে আবার সোনা বলতে স্ত্রীয়ের বদলে পুরুষ যৌনাঙ্গ বুঝে! কী মুসিবত ময়মনসিংহের স্ত্রীরা টাঙ্গাইলে স্বামী আর টাঙ্গাইলের স্বামীরা ময়মনসিংহে এসে স্ত্রী হয়ে যাচ্ছে! সম্ভবত এই দ্বন্দ্বে কারণেই টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ থেকে পৃথক হয়ে জেলা গঠন করেছিল; এবং এখন দুইটা দুই বিভাগের আওতায় আছে।
গালিরে কিভাবে শালীন করা যায় তার আরেকটা নজির রেখছে মাহদী। প্রান্তর সাথে ঝগড়াঝাটি শেষ করে একা একা বেলকনিতে গিয়ে প্রান্তকে “নটীর ছেলে” বলে সমানে গালি দিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র শ্রোতা আমি পাশে বসে আছি বাইরে চুপ থাকলেও ভেতরে হেসে খুন হয়ে যাচ্ছি। নডির পুত (নটির পুত্র!) আর হালার পুত গালি দুইটার প্রচুর ব্যবহার হত শুনেছি, কিন্তু নটীর ছেলেতে তো কখনও শুনিনি! স্বভাবতই গালির কোন স্বাদ পেলাম না
হেলিম দাদা “ছুতমত এক ফোটার ছেলে”…………….
ক্লাস নাইনে বা টেনের দিকে, আমি তখন গোড়া ধার্মিক; নামাজ শেষে মসজিদের বারান্দায় বসে আছি। মুকু্তুল মাস্টার বয়ান করছেন, বয়ান বলতে উনার স্মৃতিচারণ আর হেথায় সেথায় ভ্রমণের কাহিনি। তো কথা প্রসঙ্গে উনি কার পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন “আমার শালার ঘরের শালা”! সবাই হুড়মুড়িয়ে হেসে ফেলল; কথাটা মূলত গালি নয়, এর অর্থ উনার শ্যালকে শ্যালক। কিন্তু কথাটা গালি হিসেবে আমরা মাঝেমধ্যেই ব্যবহার করতাম। তবে অত শুদ্ধ ঢংয়ে নয়, এই “হালার ঘরের হালা হিসেবে আরকি।
যাকগে পর্ন ছবিকে ব্লু ফ্লিম বলে ডাকে অনেকে ডাকে, সেটা আমি আরও পরে জানছি। প্রথম শুনছি এক্স………….
ক্লাসরুম ছেড়ে স্কুলের কমন রুমে বা অন্য আড্ডার আসরে আমি খুব কমই যেতাম, মানে এতটাই কম যে আমার সহপাঠীরাও আমাকে অন্যরকম ভক্তি করত এই গাম্ভীর্যতার কারণে, আর অন্য ক্লাসের কেউ চিনতই না যদিও নাম জানাত পুর স্কুল; স্যারদের কাছে থেকে শুনেছে সবাই। এই নাম আমার পড়ালেখায় না যদ্দুর হয়েছে, তারচেয়ে বহুগুণ আমার নীরবতায়! আমি সবসম চুপচাপ থাকার দরুণ সবচেয়ে মার্জিত শিক্ষার্থীর খেতাব পেয়েছিলাম তখন আর নজির হিসেবে স্কুলে এখনও আমার কথা উঠে শুনেছি।
রনি- নেকেড………….
গালির শালীন অশালীন ব্যাপারটা নিয়ে একটু মজার আলোচনা করা যেতেই পারে। গালি যে নিছক একটা শব্দ বা প্রকাশের মাধ্যম তা নিয়ে ভিন্নমত থাকা সম্ভব নয়। তবে গালির শালীনতা বা অশালীনতা যে পরিস্থিতি, স্থান ও প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে, তা অস্বীকার করা যায় না। ছোটবেলায় এসব বুঝতাম না, কিন্তু বড় হতে হতে অনুভব করলাম, গালি আসলে অনেক সময় চাপা আবেগ প্রকাশের এক ধরনের ভাষা।
তবে আমার ছোটবেলার ঘটনা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট যে, আমি গালাগালিতে কখনো বিশেষ পটু ছিলাম না। কিছু শব্দ শিখেছি আর সেগুলো প্রয়োগ করেই মজা পেয়েছি। কিন্তু সেই শব্দগুলো গালি ছিল না, বরং মজার ছলে বলা কিছু শব্দ। মুক্তা জেঠিমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার মতো, যেখানে আমি হয়তো মজা করতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু ওই বয়সে বিষয়টা পুরোপুরি উপলব্ধি করিনি।
রশি জেঠা আর রাশিদ জেঠার নাম গুলিয়ে ফেলার যে ঘটনা বলেছিলাম, সেটাও আমার জীবনের এক অদ্ভুত অধ্যায়। বড় জনের নাম বড় ধরা আর ছোট জনের নাম ছোট ভাবার কৌশলটা বেশ কার্যকর ছিল, যদিও তাদের বয়সের ফারাক এখন মিলিয়ে গেছে। ওই সময়কার আমার “নাম ভুলে যাওয়া”র মজার কাহিনি এখন মনে হলে হাসি পায়। তবে বিচারকের বিভ্রান্তির গল্পটি শুনে তাদের নামের ইংরেজি বানানও এক হওয়ায় মজা লেগেছিল।
এবার আসি মাদারfাকার প্রসঙ্গে। তখন তো এর অর্থ বোঝার বয়সও হয়নি, কিন্তু শব্দটা শুনে মনে হয়েছিল, এটার একটা অশ্লীল বা অস্বস্তিকর অর্থ আছে। তাই নিজেই একটা বিকল্প “মাথাফাঁকা” বানিয়ে নিলাম, যা তেমন কোনো কষ্ট না দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিত। এই রূপান্তরিত গালিটা দিয়ে নিজেকে নিরাপদ বোধ করতাম এবং শালীনতার ধারাও বজায় থাকত।
ছোটবেলায় “সোনা” শব্দ নিয়েও মজার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমার এলাকায় সোনা শব্দের অর্থ শুনে খুব অবাক হতাম। কিন্তু টাঙ্গাইলের বন্ধুর কাছ থেকে শোনা সোনা শব্দের নতুন অর্থ আমাকে বিভ্রান্ত করে তুলেছিল। এলাকার পার্থক্য অনুযায়ী শব্দের অর্থও যে ভিন্ন হতে পারে, সেটা বুঝতে পারা আমার জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা ছিল।
আরেকটা মজার গালির উদাহরণ দিয়েছিল মাহদী। সে “নটীর ছেলে” বলত, যা আমি কখনো আগে শুনিনি। এটা শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরত। মজার ব্যাপার হলো, এই ধরনের গালি আদতে হাস্যরস তৈরি করে, কোনো অস্বস্তি নয়।
আর মুক্তুল মাস্টারের “শালার ঘরের শালা” বলার গল্পটা বর্ণনাতীত মজার। সেটা হয়তো গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি, কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে সবাই হেসে ফেলেছিল।
পর্নোগ্রাফি বা ব্লু ফিল্ম নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, সেটাও পরে বুঝেছি। প্রথমে শুনেছিলাম “এক্স…” এবং তখন এসব ব্যাপারগুলো তেমন বুঝতাম না।
আমার গাম্ভীর্যতাও তখন একটা আলাদা জায়গায় ছিল। সহপাঠীরা আমাকে সম্মান করত, আর শিক্ষকরা আমার নাম বলতেন উদাহরণ হিসেবে। এই গুণটাই আমাকে একভাবে আলাদা করে তুলেছিল।
আজকে এসব স্মৃতি মনে হলে মনে হয়, সময় কীভাবে পাল্টে যায়! ছোটবেলার এই মজার ঘটনাগুলো আমাকে জীবনের একেকটা শিক্ষা দিয়েছে।